Tuesday, 19 September 2017

কলঙ্কিত ইতিহাস


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
কলঙ্কিত ইতিহাস 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

স্বাধীন, "সোনার বাংলাদেশ"  
স্বপ্ন দেখেছিল; 
বঙ্গবন্ধু "শেখ মুজিবুর রহমান"। 
ঘুমে নয়; জাগ্রত জনতার চোখে।   

সহ্য করতে পারেনি সে' সুখ। 
তাই, ইয়াহিয়ার দুধে-কলায়  
পালিত সাপেরা,  
মরণ কামড় দিল মুজিবের বুকে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের প্রথম প্রহরে,  
ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে,  
কলঙ্কিত ইতিহাস 
সৃষ্টি হলো রক্তের স্রোতে!

পলাশির আমবাগানে ঘটে যে ঘটনা 
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। এর নেপথ্য নায়ক, 
সেই বিশ্বাস ঘাতকরাও 
লজ্জা পেল তা'তে। 
----------<+>----------

কেটে যাবে দিন

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
কেটে যাবে দিন 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

প্রিয়, আমার কাছে থাকতে যদি কষ্ট মনে করো, 
যত দূরে হোক, সুখের খোঁজে যেতে পারো তুমি। 
অতীতে যে ভালোবাসা দিয়েছো আমারে, 
সেই কথার রসে কত সুখ, খোঁজে নেব আমি। 
শূন্য এ' জীবনে, আর চঞ্চলতা কেন, বৃথা চেষ্টা, 
নির্জনে বসে আকাশের তারা গুণে সময় কাটাব। 
তুমি কষ্ট পাও যদি, কষ্ট হবে জেনে, নিশ্চই; 
তোমার সুখের খবর পেয়ে আমি সুখ পাব। 
ভেব না মোটেও কি করে জীবন কাটবে আমার? 
জগৎ স্বামিকে বিশ্বাস করি, পাড়ের ব্যপারী; 
যে কোনও উপায়ে সকলেরে করছেন পাড়। 
পাড়ের ঘাটে ডাকা সার, তাঁরে ভক্তি করি। 
অপাড় হয়ে, ভবে, রবে না কেহই, ঘাটে; 
সকলেই যাবে একদিন, তবে চিন্তা কি আমার? 
বিশ্বাস করি, নিদানের হরি; ঘাটে বসে আছে, 
আমারেও তিনি নিশ্চই করে নেবেন পাড়। 
----------<+>----------

বলদে গলদ


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
বলদে গলদ 
-- ভূপেন্দ্র দাস।   

কোন এক পল্লীর কৃষাণি ও কৃষক, 
ডিজিটাল জমি চাষ করণের শখ।
নতুন গিরস্থালি আর চাষের জন্য, 
বাজারে কিন্তে গেল বলদ আর পণ্য। 
গৃহিণীকে দেখাল, ঘরে ফিরে আসি'; 
বলদ জোড়াটি দেখে গৃহিণী খুশি! 
আদর করেই নাকে পরালো দড়ি, 
স্বামীর সাহসে স্ত্রী খুশী হয় ভারি। 
যথাকালে জমিনে চষতে হাল
 বলদ জোড়াটি খুব হলো বেসামাল! 
এক বলদ যেতে চায় বাইরের পানে, 
নাকের দড়িটি ধরে গৃহিণী টানে। 
এইবার মালিকানা পড়ল বিপদে, 
খামোখাই গোতা মারে, দুইটা বলদে! 
খুশি মনে ভুষি খায়, দুইটা বলদ! 
কৃষাণী ও কৃষকের চাষে হয় গলদ। 
আদরের বলদ তাই বেচতে না পারে! 
ভুষি খায় খুশি মনে, বসে থাকে ঘরে। 
----------<+>----------

মান ভক্ত


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
মান ভক্ত 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

মানের বাজার দেখে মুখে পায় হাসি! 
কমদামে কেনা যায়, খরিদ্দারও বেশী। 
কমদামে পায়, তাই বেশী কিনে মান।
বোঝা খুব ভারী, তাই ধীরে ধীরে যান। 
মানের ভারি বোঝার কুলি হয় যারা, 
ঘার ঘুরে পড়শিরে দেখেইনা তারা। 
দেখা যায় মেকী যত মানের বাজার; 
গেলে, মান ঠেলে দেয়, ঝোলা করে ভার! 
মনের সুখে মানকচু ইচ্ছা হলে খাবে। 
মানকচুর গুণ কত, শেষে বুঝা যাবে। 
মানকচুর গুণ যদি বুঝ চুলকানি! 
উদাসীন তেঁতুলকে গোলে খাও পানি। 
মানকচুর গুণ খুব, হজম করা শক্ত! 
বদহজমের স্বপ্ন দেখে মানকচুর ভক্ত। 
----------<+>----------

অভিসার


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
অভিসার 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

সন্ধ্যা কালে বন্ধু এলে,  
সারাটা রাত যদি বৃষ্টি হতো; 
সঙ্গসুখী, মধুর রসখেলা, 
শেষ করে, রাত হলে গত।   
মিষ্টিসুখের উষা কালে, 
মাঠে গেলে ভালো হতো। 
জমানো ঘাসে, শিশির হেসে
যুগলের চরণ ধোয়ে দিত। 
তোমারে দেখে, পূব-আকাশে, 
সদ্য উঠা সূর্য হেসে নিত। 
পাখিরা ডালে, ভোমরা ফুলে 
বসেই, জানাতে স্বাগত; 
আনন্দিত মনে মধুর সুরে, 
উচ্চাঙ্গ সংগীত গাইত। 
তখন, তোমার অভিসার, 
সার্থক হয়েছে মনে হতো। 
----------<+>---------

কথা রাখো যদি


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
কথা রাখো যদি 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

কোন প্রাণে বলো, চলে যাবে? 
এখন এই আসন্ন সন্ধ্যাবেলা! 
রাতের শুরুতেই বসে যাবে আজ, 
চাঁদের চারপাশে তারাদের মেলা। 
কষ্ট করে, রাতটুকু থাকো যদি; 
সুখ পাব আমি। যেও সকালবেলা। 
তুচ্ছ ভেবে চলে যেতে চাও? বুঝ; 
থাকলে, হবে না ঘুম; সারা রাত খেলা। 
পথে যেতে দেখবে তোমারে লোকে, 
জাগরণে (খেলার কারণে), চোখ ফোলা। 
অগোছালো পোষাকে দেখবে তোমারে, 
তাই মুখটিপে হাসবে রসিকা অবলা। 
সে' সুখের আশায়, দাসী ভাবে করি অনুরোধ, 
রাখো; আমার কথাটা, করো কেন হেলা?
----------<+>----------

বকের বিড়ম্বনা


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
বকের বিড়ম্বনা 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

প্রকৃতির রূপের বর্ণনা লিখে দিতে, 
আমারে অনুরোধ করেছে লাকি। 
তা'র আশা পূর্ণ করতে, ভক্তি করি দেবী সরস্বতী
 মায়ের কৃপায়, কলমে কি লেখা আসে দেখি। 
সকালে বাগানে যাই, ইচ্ছা ফুল তুলব। 
প্রিয়ার হাতে ফুল দিলে হয় খুব সুখী। 
গন্ধযুক্ত ফুল তোলা শেষ হলো যখন, 
সাজি হাতে, তখন ঘরে ফিরে দেখি। 
আমার অপেক্ষায়, বারান্দায় বসে আছে, 
প্রকৃতির রসপান আশায়, আগ্রহিণী লাকি! 
তা'রে খুশি করতে, নিজের দায় বুঝে, শেষে 
বারান্দায় বসেই নিতে হলো ঝুঁকি। 
জিজ্ঞাসা করছি আলোচনার জন্য, তুমি... 
উড়ন্ত বক কোথায় দেখেছ? বলো শুনি। 
পাখিটি বেশ রসিক বটে, তোমার চোখের ভিতর, 
চিরকাল সুখে থাকার জন্য, বাসা বাঁধেনি? 
বলাটা বাহুল্য হবে, বক পাখি মাছ খেয়ে বাঁচে। 
পোষাক ও আচরণে সাধু মনে হয়; তবে... সে' থাক; 
যেখানে দেখবে তুমি, জলা, ঝিল নির্জন আছে; 
সেখানেই হাঁটু জলে বসে আছে সাধুবেশী বক। 
তপস্যায় রত যেন, গভীর বনে মুনিবর! 
ঘুম কাতর চোখে ঝিমুচ্ছে, তার কত সুখ। 
মাঝে মাঝে দেখা যায়, শিকারির ফাঁদে! 
প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঝাপটায়, বক। 
----------<+>----------

মৃত্যুঞ্জয়ী


কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,) 
মৃত্যুঞ্জয়ী 
-- ভূপেন্দ্র দাস। 

বাস্তবতার ভিষণ জীবন যুদ্ধে, সংসারে, 
স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের সঙ্গে, জীবন সুখে চলে। 
কিন্তু জীবন চিরকাল স্থায়ী নয়, তাই-- 
সার শূন্য, এসব, ডুবে যায় সময়ের তলে।
কেহ যদি ইচ্ছা করে, মৃত্যুকে জয় করতে পারে; 
জীবন তরী সাজালে রঙধনুর সাজে। 
ডুবেনা সময়ের তলে, কাজ গুণে; 
চিরকাল টেকসই; লাগে সবের কাজে। 
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাবেন যারা, 
যত্ন করা উচিৎ তা'দের, এই রকম সাজে। 
নিজের আগ্রহে, যত্ন করে যারা, তা'দের 
অন্তরে বসন্ত চলে; বাঁশির গান বাজে। 
সংসারে নিজের সৃষ্টির জন্য তা'রা, 
মরেও অমর হয়; অনুপম কাজে। 
পৃথিবীকে ছেড়ে যায় তাঁরা, হাসি মুখে; 
অমরতা লাভ করে মানুষের মনের মাঝে। 
----------<+>----------

সান্ত্বনাতে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

সান্ত্বনাতে
-- ভূপেন্দ্র দাস।


হঠাৎ মায়ের বকুনিতে, চোখ ছেড়ে ঘুম দূরে গেলে!
জোছনা রাতে নিরালাতে, কাঁদছে বসে, একটি ছেলে!
মন খারাপের কথা বটে গুড়ুম গুড়ুম পড়ছে পিঠে।
মনের দুখে খোকাবাবু, কাঁদছে বসে খেলার মাঠে।
জিজ্ঞাসিলে কয়না কথা, চাপাকান্না কাঁদছে!
কোন কথাতে সান্ত্বনা দেই, আমার বুকে বাঁধছে।
অনেক পরে গলা ধরে বলছে, "আমার ভাই।
রাতে চোখে ঘুম আসেনা, চিন্তা করি তাই।
মায়ের সাথে আছি, কিন্তু পিতার আদর পাইনা!
সেই কারণে দুখি মনে, রাতে কিছু খাইনা।"
এই কথাতে সান্ত্বনাতে, বলছি, আরে বোকা!
নেইতো পিতা কি হয়েছ? তুই কি ছোট খোকা?
অনেক বড় হয়ে গেছিস, আরো বড় হবে।
পিতা-মাতা তোর সাথে কি, চিরকালই র'বে?
তবু বলি ভাগ্যটা তোর, অনেক অনেক ভালো।
সুখের দুখের কথাগুলি, মা'র কোলে তো ঢালো।
মা যে দিন থাকবে না তোর, জীবিত এই জগৎ মাঝে!
বুঝবে তখন আমার মতো, বুকে কত ব্যথা বাজে।
মায়ের মতো আপন কেহ, নাই জগতে, আমার মতে।
আদর, শাসন, আশিস ভাবিস, রাগ করিস না মায়ের সাথে।
-----------<+>-----------