Tuesday, 13 December 2016

কুন্তীর ম্বয়ম্বর

কুন্তীর ম্বয়ম্বর
                     --- ভূপেন্দ্র দাস।

স্বয়ম্বর সভা মাঝে,
কুন্তী-পিতা ভোজ-রাজে,
প্রকাশিল, রাজন্য সকাশে।
সূরসেন-সুতা, পৃথা;
কুন্তী নামে, মম সুতা।
প্রবেশিকা, সংসার সমরে।
প্রশ্ন তার, সভা প্রতি;
করিতে বাসনা অতি;
প্রার্থী গণে, রাজ-কুল মাঝে।
পতি নির্বাচন হেতু;
উত্তর আধারে সেতু,
রচনার; অন্তরে আকুতি।
নৃপতি-কুমার কুলে,
উত্তরে উত্তীর্ণ হলে;
ধার্য করে, জীবনের সাথী।
সভাসদ, আজ্ঞা লাভে;
অতি সাবলীল ভাবে;
প্রকাশিল যাচনার সার।
"গৌতম পত্নী'-দেবরাজে;
ক্ষতি করে, রতি কাজে;
তা'তে, দণ্ড-প্রাপ্তি তার।
গত বহুদিন, পরে;
শ্রী-রামচন্দ্র ক্ষমা করে।
কেমন-তর ন্যায় বিচার?
এই অপরাধ ক্ষমা করে,
ভবিষ্যতের-প্রজন্মরে,
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে;
কী দানে; শ্রী-ভগবান;
শুদ্ধ, না, ভুল উদাহরণ?"
জানিবারে অন্তরে আকুতি।
সভাসদে, প্রশ্ন শোনে;
ভিন্ন জনে, ভিন্ন মনে;
প্রয়াসীল দানীতে উত্তর।
প্রথম বলে, "ভগবান;
অকারণে কৃপা নিধান।
ক্ষমা দান, করিল সতীরে।"
দ্বিতীয় কয়, "বালী, রাবণ,
অপরাধী, অভাজন;
সুপথে না চলে হীন মতি।
অকারণে কৃপা নিধান,
করে' কেন সাজা দান!
মৃত্যু-বাণ হীন অভিমুখে।
তাই জানিতে প্রশ্ন করা,
প্রাণে মারা, কেমন ধারা!
পক্ষপাত? না, রুক্ষ বিধান?"
তৃতীয় কয়, এই ফাঁকে,
"দণ্ডেরওতো সীমা থাকে।
হেন বোধে, মুক্তি দিল তা'রে।"
চতুর্থ কয়, "আমার মতে,
অহল্যা, খুব দুঃখ চিতে;
ধারণ হেতু, শিলা রূপ।
স্বামী সেবা, কার্য-ফলে,
চলা, বলা, রুদ্ধ হলে;
অন্তরে হয়, অনুতাপ।"
মৌন, অনেক স্বরব-জনে;
প্রশ্নকে বিপত্তি গণে;
এত কঠোর; সতীর সাজা!
কিছুকাল ধৈর্য ধরে,
জনরব, নীরব করে;
উত্তরিল, পাণ্ডু রাজা।
"বিচার কাজে, কৃপার কথা!
পক্ষ, রুক্ষ সকল বৃথা।
নীতি শাস্ত্র, গতি নীর হেন।
অকারণে কৃপা নিধান;
এই ঘটনে দেখতে পান,
বামা, দুষি নহে কদাচিৎ।
দেবরাজের কার্য-মান,
কু-বাসনা প্রণিধান!
দণ্ড-ভোগ নহে অনুচিত।
নিজ-রূপ গুপ্ত করে;
গৌতমের রূপ ধরে;
সতী' নীড়ে, করিল প্রবেশ!
সরল্যে বিবশা ধনী;
স্বামীকে দেবতা জানি,
যাচনায়, সেবা দিল তারে।
হেন কালে স্নান সেরে,
গৌতম ফিরিল ঘরে;
পলায়ণে দেখে দেবরাজে।
দেখে, নিজ রূপ ধরে,
দেবেন্দ্র পশিল ঘরে!
তস্কর হেন, যেন গতি।
অন্তরে উপজে তাপ;
ঋষিপ্রোক্ত অভিশাপ।
কমণ্ডলু বারি ঝাড়ি বলে।"
" ভগে মজা, দেবরাজ;
দেহ তাঁর ভগে সাজ।"
প্রতারণা' ফলে পরিণাম।
জায়াকে নেহারি' বলে,
"পাপীয়সী, মোর কুলে;
তব তরে, কালিমা লেপন!
আমি তোরে দানী শাপ
ভোগ নিজ কার্য তাপ,
শিলা রূপে থাক তুমি হেথা।"
"মুনি--রাজ কোপে, বামা;
বিনয়ে পেলনা ক্ষমা;
শিলা রূপে, ভূমে নিপতিতা।
দোষে, রোষ হেতু, মুনি;
করে উপবীত খানি,
সতী প্রতি শাপ দানে ভ্রমে।
বিচার কার্য চলে যবে,
নিন্দুকেরে বন্ধু ভেবে;
সু-জন যদি, কু-জনেরে দেখে!
হীনের পীড়ন চলে যদি,
ন্যায় বিচারে আশাবাদী;
কোন আশাতে হয় লোকে!
তাইতে বলি, আসুন সবাই,
ঘটনাটির অন্তরে যাই।
অপরাধী নিরুপণ হেতু।
বিচার করা সমীচীন;
দু'য়েতে, কার কার্য হীন?
সমীচীন, তাঁরে সাজা দান।
হীনের বোঝা, দীনের কাঁধে!
দান করাতে, বিবেক বাঁধে।
সমাজের সমূহ কল্যাণে।
অকারণে কৃপা নিধান;
অহল্যাকে ক্ষমা দান, 
করা, তাঁর লোক হীত কাজ।" 
উদার, মনীষা গুণে, 
বিচক্ষণ, বিচারণে; 
পাণ্ডু-রাজা, রাজ-কুলমণি।
উপনীত, অত্র সভা' মাঝে;
দুষীল দেবতা রাজে।
শঙ্কা নাহি করে ভবিষ্যতে।
বাঞ্ছিত উত্তর লাভে,
সুবদনী প্রীতি ভাবে;
মালা দানে, বধূ সাজে, তাঁর।
-------------<+>--------------




0 comments:

Post a Comment