রাবণকে
সীতার অভিশাপ
--- ভূপেন্দ্র দাস।
সুযোগ সন্ধান কারী,
ছলে মুনি রূপ ধরি';
জানকী সদনে চাহে ভিখ।
সারল্যে বিবশা ধনী,
কাপটিরে সাধু জানি;
ভিক্ষা-দানে হলো আগুয়ান।
বিদেহ নন্দিনী সীতা,
মুনি বাকে অভিভূতা;
শোন সতী; রক্ষঃপতি, কহি।
শ্রেষ্ঠ যত কিছু আছে,
যদি মোরে নাহি যাচে;
বলে হরি, আমি দশানন।
চল ধনী মোর সাথে,
চড়িবে পুষ্পক রথে;
রক্ষঃপতি, করিল বন্দিনী।
স্মরিয়া দণ্ডক গেহ,
ভুলিয়া নিজ দেহ!
রঘু-কুল-মণি, রাম প্রিয়া।
অশোক কাননে বসে;
দুঃখ মাঝে সুখে ভাসে!
পতি-প্রেম-স্মৃতি-প্রীতি নীরে।
হেন কালে রক্ষঃপতি,
লালায়িত; সীতা প্রতি,
বিদ্ধ হলো, কামনা-শরে।
সীতারে আনীতে বশে,
কূট-কথা বলে হেসে;
প্রেম দান করিল, সতীরে!
রাক্ষসের কথা শুনে,
পাণী চাপিল কানে;
ক্রুধ ভরে কহে তীব্র স্বরে।
রে-- নীচ, ঘৃণ্য দুরাচার,
" ধিক্কার শতবার,
দানী; আমি তোরে!
আপনার দারা ভুলি,
পর-দারে কুতূহলী!
লঙ্ঘিবার তরে!
রমন সুখের লাগি,
হীতে অচিন্ত ভোগী।
বংশ ধ্বংশ হবে তোর পাপে!
হায়রে-- অভাগা; হেরি,
ভালে শনি লাগা, তোরি;
সাধে পড়া কর্ম-রাশি ফেরে।
রাধে, অপরাধে, ভেদ
কত, জাননারে খেদ!
কর্ম-ফল, ফলিবে নিশ্চিত।
শোন্ পাপী তোরে কই,
জানিবে কেমনে তুই!
কুকর্মের স্বামী!
রে-- নীচ, দুরাচারী,
ভীতি নাহিক তাঁরি;
পাপ-পথ গামী!
তোরে জিজ্ঞাসি, যথা--
শৃগাল, কবেরে, কোথা
শার্দুলী লঙ্ঘিল?
কদাপি না শুনি ভবে,
বায়সে, আয়াসে কবে,
লঙ্ঘিল গরুড়ে!
রে--পাপিষ্ঠ, অনধিক,
বলিব কী, তোরে, ধিক্;
অর্থ হীন দর্প কর বৃথা।
নাহি ভাব আগু-পিছু,
কার্য পরিণাম, কিছু;
নাহি তোর বোধে!
সুহৃদে সুকথা কয়,
শুভ কথায়, ক্ষোভ হয়;
কুল-নাশ সাধে।
পাপিষ্ঠ শোন রে, কহি,
জীবন ধারণে রহি;
দশা তোর, দর্শিতে বাসনা।
তস্কর; ছলনা ফাঁদে,
মোরে লঙ্ঘনের সাধে!
হেথা মোরে করিলে বন্দিনী।
শোন, রে-- কুমতি, চোর!
শুভ কথা, শোন, মোর;
কর্ম-ফল, ফলিবে নিশ্চিত।
জানিও সে' দিশা,
কুকার্যে হলে নিশা;
স্ববংশে, নিশ্চিত মরে।
বিপর্যস্ত ভাগ্য তোর,
দানী, অভিশাপ মোর;
জেনে রাখ হবেনা অন্যতা।
শোন সুশান্ত চিতে,
পিতৃ-কুলে, পিণ্ড দিতে,
পুত্র-কুলে তোর;
রহিবেনা কেহ; ইহা,
অভিশাপ মোর।"
-------------<+>--------------
0 comments:
Post a Comment