Wednesday, 21 December 2016

খোকার সকাল

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
খোকার সকাল
--- ভূপেন্দ্র দাস।

শরতের রীত,
মৃদু বোধি, শীত;
নিশি হলে সারা।
পূবের গগণে,
ভানু উদয়ণে;
নিবে যবে তারা।
শাখে, পাখি সব,
করে কলরব;
ভাব, তরু ছাড়া।
বিহগ কূজন--
অলি-কুল গান,
রবে জাগে পাড়া।
আলসের ঝোঁকে,
ঘুমে থাকে সুখে,
হেন কালে যা'রা;
গুণীদের বাণী,
হলেও জোয়ানী
ধরে তা'রে জরা।
কথা শুনে খোকা,
রুটিনে যা' লেখা;
শুরু করে পড়া।
ঘুম থেকে জেগে,
ফুল তোলা আগে;
প্রাতঃকাজ ধারা।
ফুল তোলা' পর;
লেখা আছে আর',
দাঁত-ব্রাশ করা।
এর পরে লেখা,
শ্রেণী-পাঠ শেখা;
পঠনের দ্বারা।
অতি প্রয়োজন,
পাঠে দেওয়া মন;
হৃদয়ের তাড়া।
তাই বাছা ধন--
আসীনে এখন,
শুরু করে পড়া।
-------০০০-------

ধর্ম প্রাণ

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
ধর্ম প্রাণ
--- ভূপেন্দ্র দাস।

দেখে সবে, প্রীতি ভাবে;
মানেন যিনি "রব"।
এই জগতে, চলার পথে,
হয়না পরাভব।
ইচ্ছে গুলি প্রশমনে,
থাকে তুষ্ট ভাব।
খোদায় ভীতি, থাকলে মনে;
ভক্তি ভজন লাভ।
একা চলে, সে কেমনে?
তার সাথে রয় সব।
------------০০০------------


সমাজ সেবায় পদক্ষেপ

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
সমাজ সেবায়
পদক্ষেপ
--- ভূপেন্দ্র দাস।

আদাব, সালাম, নমস্কার,
মোর বক্তব্য করিবার,
কাম্য সবার সম্প্রীতি।
মাননীয় সুশীল মতি,
সমাজের তিনটি ক্ষতি;
প্রকাশিতে মোর আকুতি।
★ শিশুর বিয়ে;
★ শিশুর শ্রম;
★ শিশুর শরীর, 
মনের ভীতি!
তিনের প্রতি, সহানুভূতি,
জন মনে হোক স্থিতি।
শিশুর বিয়ে দিতে গিয়ে,
মা-বাবা, যে দায় সারে!
তা'তে ক্ষতি সমাজ প্রতি;
চাপছে সদাই; দায় ভারে!
স্বাস্থ্য নিয়ে কী বলিব?
সবই হবে বাহুল্য;
দেহের প্রতি অত্যাচারী,
নাহি জানে দেহের মূল্য।
শক্তি খাটায় যুক্তি ছাড়া;
রোগ দানে তাই অকাল জরা।
প্রশাসনের নিকট তা'রা,
কী হবে আর দোষী ছাড়া!
আঠারো পার হওয়ার আগে,
কনের বিয়ে দিবে যা'রা;
তা'রা সবে জেলে যাবে,
দণ্ড আছে ধার্য করা।
দণ্ড ভোগে, দোষের যোগে,
জেলের ঘরে বসত করা।

এবার বলি শ্রমের কথা;
শিশু শ্রমের পরিণাম,
লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়ে,
কাজে ফেলে মাথার ঘাম!
কাজের মাঝে বড় হয়ে,
সাজে অকাজ কর্মী!
সমাজের বোঝা স্বরূপ,
এ'সব জীবন ধর্মী!
শিশুর শরীর-মনের কথা,
যতই বলি হবে কম;
ভয় ধরানো সার্থ-বাদী,
শিশুর শরীর-মনের জম।
তা'দের কথার তালিকাতে,
হয় মালিকা ফুল ছাড়া;
কাঁটা দিয়ে ঘটা মালা,
শিশুর গলার হার-ছড়া।
পরিত্রাণের অভিপ্রায়ে,
করণীয় কার্য ভাবি।
সি,ফোর,ডি; প্রবল্প নেয়,
সংস্থা-- এফ,আই,বি,ডি,বি।
আট প্রকারের আচরণে,
নাগরিকের দায়িত্ব;
পালনে হয় জনপদে,
স্বস্তি, সুখের স্থায়িত্ব।
★তা'র মাঝে, প্রথম হলো;
জন্ম নেওয়া শিশুর কথা।
নিবন্ধনের দায়িত্বটি,
পালন করুন, শিশুর পিতা।
★ দু'য়ের কোঠায় সাবধানতা,
নিউমোনিয়া রোগ তরে!
এই রোগেতে অনেক শিশু,
অকালেতে যাচ্ছে ঝরে।
★ তিনের কোঠায়,--
দুধ খাওয়াবেন,
ষষ্ঠ মাস অবধি।
বাড়তি খাবার নাহি দিবেন;
সুখ লালসা হয় যদি।
মায়ের বুকে দুধ না এলে;
চিকিৎসকের স্মরণ নিন।
মেনে চলুন এ'সব কথা;
সুখ ভোগে যাবে দিন।

★ চারের কোঠায়,---
হাত ধোয়াতে,
সাবান করুন ব্যবহার।
খাবার খেতে যাওয়ার তরে,
টয়লেট থেকে আসার পর।
স্বাস্থ্য রক্ষা হেতু কিন্তু,
পাণী ধোয়া খুব দরকার।
★ পঞ্চমে হয় যৌবনের গান,
বিকাশ লাভের উচ্ছ্বাসে।
নারীর সাথে মন বিনিময়;
সহবাসের ইচ্ছা-সে।
ভবের হাটে, নারীর ঘাটে,
অগণিত নৌজোয়ান;
ডুবায় তরী ইচ্ছা করি',
সুখ লালসায় দুঃখ পান।
তাদেরকে "এইডস" রোগে ধরে।
ব্যাবিচারির সঙ্গ গুণ।
কাল না হতে অকালে হয়;
জীবন লীলা অবসান।
★ ছয়ের ঘরে, মনে পড়ে,
প্রকৃতির প্রকোপ লীলা!
ঝড়-কারণে সবার মনে,
দুর্যোগ করি মোকাবেলা।
শক্তি সনে যুক্তি লাগে,
আরো লাগে সামর্থ;
গুণ সমূহ যা'র রয়েছে,
তা'র কাছে, ওই খেলা ব্যর্থ।
★ সপ্তমে হয় ইন্জুরি; আর
ছোট খাটো আঘাত, ক্ষত।
স্বাস্থ্য সেবায় প্রয়োজন,
সবার আগে সময় মত।
একটু কেটে কী'বা ঘটে?
অপচয়ের যুক্তি যত!
ডাক্তারে ভয় দেখায়, বটে;
এই হেলা ভাব যা'র মনে।
টেট্যানাস খেলা করে,
নিজ গুণে, রোগীর সনে।
এ'রূপ যখন বিপত্তি হয়,
তখন ওষুধ প্রতিবিষে;
সময় মত প্রয়োগ হলে,
মুক্ত হয় সে, অভিলাষে।

★ আটের কোঠায়, গর্ভবতী;
প্রথম, কিংবা-- দ্বিতীয় বার।
চেকাপ করা প্রয়োজন;
শঙ্কা মুক্তি কারণ, তার।
শঙ্কা নাহি, ডঙ্কা মারে;
টঙ্কা-'ভাবে, অভাজন।
অপুষ্ট প্রসূতী গণের,
ত্রাণের তরে করে পণ।
বিপত্তির পূর্বাভাসে,
দক্ষ-জনের পক্ষ নিবে;
সঙ্কটের সম্ভাবনা,
প্রয়াস কর দূরে যাবে।
এ' সঙ্কটের সমাধানে,
নিয়ে গণ-হিতের দাবী।
সি,ফোর,ডি, প্রকল্প নেয়,
সংস্থা,-- এফ,আই,বি,ডি,বি।
স্বনাম ধন্য, এই সংস্থাটি,
রাজধানীতে মূল কেন্দ্র।
জনগণে সেবা দানে
আকাশে উদিত চন্দ্র।
লিখেছি, তাই পরিচয়ে,
ভূপেন্দ্র দাস, নাম বলি।
পিতা--শ্রী হরি ধন দাস;
সে-নামে, স্বনামে চলি।
বাহাড়া, মোর গ্রামের নাম।
পায়নি বিবর্তনের লেশ!
শাল্লা আমার উপজেলা।
ঘুঙ্গিয়ার গাঁও স্থান বিশেষ
সুনাম-গঞ্জ, আমার জেলা।
পরিচয়ে করছি পেশ।
সিলেটে বিভাগ হয়েছে।
মোর পরিচয়, সবিশেষ।
বাংলাতে কই মনের কথা,
জন্ম ভূমি বাংলাদেশ। 
------------০০০------------

Tuesday, 20 December 2016

অভিসারিকা

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

অভিসারিকা
--- ভূপেন্দ্র দাস।


সন্ধ্যা কালে বন্ধু এলে, 
বৃষ্টি হলে, সারাটি রাত; 
সঙ্গ সুখী, রস-খেলা,
সাঙ্গ করি', হতে প্রভাত।
সুখ-দায়ী উষা কালে--
মাঠে গেলে ভালো হতো।
নিশির শেষে, শিশির হেসে,
চরণ যুগল ধোয়ে দিত।
তোমায় দেখে, পূব আকাশে,
তরুণ ভানু, হেসে নিত।
পাখি শাখে, বলত ডেকে,
অলি কলি পুলকিত।
জাগরণে রাত যাপনে;
সখি তুমি, সুখে ভূত!
------------০০০-------------



দুরাশা

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)


দুরাশা
--- ভূপেন্দ্র দাস।

আশা তরী ভাসে যা'র;
দুরাশার নীরে!
অদম্য চলনে, কভু,
নাহি ভিড়ে তীরে।
তীর পানে ধায় তরী;
তীর যায় দূরে!
তবু' ভাবে, তীরে যাবে;
নাহি ফিরে, ঘরে।
ঘর ছেড়ে, দূরে ঘুরে;
ফিরিবে কী করে!
ঘর, তীর, হারা-জন,
দুরাশায় মরে।
------------০০০------------


মেঘ দূত

মেঘ দূত 
--- ভূপেন্দ্র দাস।

একদা বরষার গোধূলি লগনে;
সখা সোহাগিনী, কোনও প্রিয়া।
সখা-সুখ, স্মৃতি প্রীতি নীরে,
সিনানের বাঞ্ছা মনে নিয়া।

বিরহিণী; স্মৃতি রোমন্থনে, 
একাকিনী উদ্যানে বসিয়া।
মেঘ রবে, সুখ ভাবে,
হরষিতে উঠিল হাসিয়া।

" সখী, তুমি দুখী; ভূত,
কী কারণ দেখিয়া?
আসিবেন, রাজ পুত;"
মেঘ দূত, কহিল ডাকিয়া।

" মেঘ ডাকিছ নভ কোণে ,
মধু-মাখা বার্তা রবে!
বিজলী হেসে, কও ঝিলিকে, 
সখা মোরে দেখা দিবে।

পোড়া পরাণ জুড়ালো মোর,
তোমার শীতল বার্তা গুণে।
মাধুর্য রস কল্পনাতে,
হেসে নিলেম খুশি মনে!

তোমার কথায় জেনে নিলেম ,
কেমন আছে, বন্ধু আমার।
মন্দ চলে দিন গুলি মোর,
বার্তা বহন কার্য তোমার।

চপল তুমি ছোটে বেড়াও,
আকাশ পথে, বায়ু ভরে;
বন্ধুরে মোর খবর দিও
আশায় থাকি, দেখার তরে।

পর সমাচার তাঁকে বোলো;
এখন চলে শ্রাবণ মাস ,
মন যদি চায় আসে যেন,
ভোগ করিতে, সুখ মধু-রস।

বকুল ফুলে গাঁথি' মালা।
তাঁরে বরণ করণ হেতু।
আজ আসিবে, কাল আসিবে,
আশাতে মোর কাল চলে তো!

সেথায় তুমি সোহাগ সুরে,
মাধুর্য রস সুধা ভাষে;
বার্তা দিও বন্ধুরে মোর, 
ললিত মধুর প্রীতি রসে।

আমি আছি কেমনে বাঁচি,
সে' সব কথা বলবে শেষে।
ব্যথা যেন পায়না বঁধু,
প্রিয় তোমার বলার দোষে।

ধন্য হবে মিলন তোমার,
প্রিয় সখার সঙ্গ গুণে। 
ভাব বিনিময়, ভাষাতে নয়;
একান্তই, আঁখির বাণে,

উষার আলো ফোটবে যখন
তখন নিজে, ক্লান্ত জেনে,
বিরাম নিবে, আরাম হেতু;
শীতল ছায়ের গহন বনে।

স্বার্থ বিনে পরার্থে সুখ,
দানের বিধান, সাধু মানে।
তোমারে মোর বার্তা সঁপা,
মহান, গুণী সাধু জেনে।"
-------------০০০--------------


Saturday, 17 December 2016

রাবণের প্রতি সমুদ্র

রাবণের প্রতি
সমুদ্র
                         --- ভূপেন্দ্র দাস।


বাড়বাগ্নি প্রজ্বলিত,
তরঙ্গ শিখরে!
ধেয়ে আসে, অতি রোষে;
লঙ্কা অভিমুখে!
ভর্ৎসিতে রাবণে।
গম্ভীর তরঙ্গ রব,
বুঝি অনুভবে; যথা---
রে-- দুর্মতি!
পরিহাস কর তুমি, মোরে।
কী সুখে পরেছি মালা?
কী গুণে কিনিল? মোরে,
রঘু-কুল-মণি; সীতা-পতি।
শোন; রে-- পাপিষ্ঠ!
যে হেতু পরেছি আমি,
শিলা-সেতু হার!
সে' সকল কথা;
তুমি বুঝিবে না।
তার হেতু,
এবে তুমি, অহং-বলে অন্ধ!
নচেত, চিন্তিতে তুমি,
কার্য পরিণাম!
কভু না হরিতে সীতা।
মুনি-বেশ ছলে।
সাধে, পাশিয়াছ তুমি,
লালসার ফাঁদে!
মোহ, করিয়াছে তোরে অন্ধ!
হারিয়েছ ভাল-মন্দ,
বিবেচনা বোধ।
তাই, তুমি,
পরিহাস করিলে আমারে!
কিন্তু, তব বাক্য বাণে,
নহি বিচলিত। হেতু,
পর-দোষ অন্বেষণ করা
সদা, মাৎসর্যে বিধিত।
হায়রে--, ত্রিকুটে 'স্থিত,
লঙ্কা-নামী অলকার পতি!
চিনিলেনা জনার্দন।
রঘু-কুল-মণি; রাম নামী।
সুখে, বনবাস যাপে।
সীতা রূপী, রমা সহ-গামী।
আরো আছে তাঁর সাথে;
সৌমিত্রি লক্ষণ!
ক্রোধে যা'র, বহ্নি প্রজ্বলিত!
মূর্খ তুমি, দশানন;
দর্প কর বৃথা।
বুঝিবে রামের গুণ;
প্রত্যক্ষে, নিশ্চিত।
সীতা রূপী রমা হরা,
দুষ্কর্মের ফলে!
রে-- নির্বোধ!
বুঝিবে কেমনে তুমি,
সৌর্য গুণ তাঁর।
যে রাতুল চরণে বাস,
সদা করে অভিলাষ;
বায়ু-পুত্র হনু, বলীয়ান্।
যে তোমার
লঙ্কাপুরে সৃজিল তাণ্ডব!
পরাক্রম তাঁরি,
পরিমাপ করিতে,
ব্যর্থ হলে তুমি!
বুঝিবে রামের গুণ, ত্বরা
হবে শুভ লাভ,
তোর ভালে; অরিন্দম বলে।
শোন, রে-- নারকী!
তখন বুঝিবে; যবে হবে,
তোর কুল-নাশ! রণে;
জানকী-বল্লভ সনে,
সমরের স্থলে।
------------০০০------------


পুতুল বিয়ে

পুতুল বিয়ে
--- ভূপেন্দ্র দাস।

কাল, সখী মোর নতুন ঘরে,
পুতুল বিয়ে হবে;
তুমি সখী, সেই বিয়েতে,--
আমার সাথে র'বে।
তুই না-হলে, বলতো সখী,
কী করব আমি?
সোহাগ সাধায় যাই কেমনে?
নতুন নগর ভ্রমি!
যাই কেমনে? ফুল বাগানে,
তোলতে বিয়ের ফুল।
বর আসবে, ঢাক বাজবে,
বিরাট জন-রোল!
এই সকলে অবহেলে;
কাজ কি উঠে হাতে!
কনে আমার পর হয়ে যায়!
দিই বিয়ে কী মতে?
হিয়ার উপর পাথর দিয়ে,
দিতে হবে বিয়ে!
বরের মা'-য়ে, মোর কনেটি,
যায় যদিও নিয়ে!
এমন যদি খেলার বিধি!
খেলতে হবে সবে;
আপন ভুলে পর হতে হয়!
পরকে আপন ভেবে।
---------------০০০---------------




Wednesday, 14 December 2016

কৃষ্ণ লাভে শাস্ত্র

কৃষ্ণ লাভে
শাস্ত্র
--- ভূপেন্দ্র দাস।

কাব্য কোকিল ডাকলে কেন,
শাস্ত্র শিকোয় উঠবে?
তালি দেওয়া কথার কদর,
ফাগুন কেন টুটবে?
বসন্ত কাল আগমনে,
গন্ধবহের, ছন্দ-গতি।
ললিত সুরে গীত করে, 
ভাব রসিকে, প্রেম-গীতি।
রসরাজে, কেমন সাজে,
গোপী সনে করেছে রাস!
মাধুর্য রস, লীলা কথা,
বৃন্দাবনের, শ্যাম ইতিহাস।
কেমন করে, রাখাল রাজা,
বেণু বাজায় কদম তলে।
কী কৌশলে, ভানু সুতা,
জল ফেলেছে, জলের ছলে।
ঘড়া কোলে, ত্বরা চলে;
বংশী-ধারীর অংশী ভাবে।
কুলে ভুলে, কদম তলে,
রাই, মাধবের সঙ্গ নিবে!
ব্রজ-বালা, নিজ ভোলা;
শ্যামের প্রেমের সুখ লাভে।
শ্যাম চরণে, যায় ম্মরণে;
উজার করে সকল দিবে।
মোহন বেণুর ললিত সুরে,
বান ডেকেছে, প্রেম যমুনায়;
শুদ্ধ ভাবে, প্রীতি লাভে,
ঘড়া ভরি' জল নিলে, আয়।
বাজায় বেণু, চরায় ধেনু;
গোকুল গোঠে, রাখাল শ্যাম।
প্রেমের ছলে, সাধন বলে,
ঠাঁই নিল রাই, শ্যামের বাম।
এই যুগলে, সাধন হলে,
সাধক চলে, গোলক ধাম।
জন্ম, মৃত্যু, বারণ করে,
অজপা, গোবিন্দ নাম;
গাড়ি, বাড়ি, নারী লাভে;
ভবে আসার কি'বা কাম?
ভূপেন্দ্র কয়, তত্ত্বকথা,
এই পর্যন্ত করি ক্ষান্ত;
কথার পরে কথা বাড়ে,
কৃষ্ণ কথার হয় না অন্ত।
শ্যাম-চরণে, দীন মনে,
দূর থেকে, করি প্রণাম।
অপরাধ! অনেক হয়েছে;
শিষ্ট গণে কষ্ট দিলাম!
বিরাজিত সাধু যত, 
জুড়িয়া গোকুল ধাম।
সবার কাছে ক্ষমা চাহি,
জানি না সকলের নাম!
জয়চাঁদ গোঁসাই, মন্ত্র দিছে;
তাঁর চরণে, রয় প্রণাম।
জয়চাঁদ বলে--, "সাধু হলে;
ভাব রসে কাপটিক ধাত।
নিপুণ ভাবে করে তবে,
লোক দেখানো প্রণিপাত!
ভক্তি ছাড়া দেয়না ধরা,
কৃষ্ণ চন্দ্র জগন্নাথ।
জীবন ধর্ম সকল কর্ম;
শাস্ত্র কথার মর্ম ভাবে,
পালন প্রয়াস অনিবার্য্য;
অনাদি নাথ কৃষ্ণ লাভে।"
-------------<+>--------------



রাবণকে সীতার অভিশাপ

রাবণকে
সীতার অভিশাপ
--- ভূপেন্দ্র দাস।

সুযোগ সন্ধান কারী,
ছলে মুনি রূপ ধরি';
জানকী সদনে চাহে ভিখ।
সারল্যে বিবশা ধনী,
কাপটিরে সাধু জানি;
ভিক্ষা-দানে হলো আগুয়ান।
বিদেহ নন্দিনী সীতা,
মুনি বাকে অভিভূতা;
শোন সতী; রক্ষঃপতি, কহি।
শ্রেষ্ঠ যত কিছু আছে,
যদি মোরে নাহি যাচে;
বলে হরি, আমি দশানন।
চল ধনী মোর সাথে,
চড়িবে পুষ্পক রথে;
রক্ষঃপতি, করিল বন্দিনী।
স্মরিয়া দণ্ডক গেহ,
ভুলিয়া নিজ দেহ!
রঘু-কুল-মণি, রাম প্রিয়া।
অশোক কাননে বসে;
দুঃখ মাঝে সুখে ভাসে!
পতি-প্রেম-স্মৃতি-প্রীতি নীরে।
হেন কালে রক্ষঃপতি,
লালায়িত; সীতা প্রতি,
বিদ্ধ হলো, কামনা-শরে।
সীতারে আনীতে বশে,
কূট-কথা বলে হেসে;
প্রেম দান করিল, সতীরে!
রাক্ষসের কথা শুনে,
পাণী চাপিল কানে;
ক্রুধ ভরে কহে তীব্র স্বরে। 
রে-- নীচ, ঘৃণ্য দুরাচার,
" ধিক্কার শতবার,
দানী; আমি তোরে!
আপনার দারা ভুলি,
পর-দারে কুতূহলী!
লঙ্ঘিবার তরে!
রমন সুখের লাগি,
হীতে অচিন্ত ভোগী।
বংশ ধ্বংশ হবে তোর পাপে!
হায়রে-- অভাগা; হেরি,
ভালে শনি লাগা, তোরি;
সাধে পড়া কর্ম-রাশি ফেরে।
রাধে, অপরাধে, ভেদ
কত, জাননারে খেদ!
কর্ম-ফল, ফলিবে নিশ্চিত।
শোন্ পাপী তোরে কই,
জানিবে কেমনে তুই!
কুকর্মের স্বামী!
রে-- নীচ, দুরাচারী,
ভীতি নাহিক তাঁরি;
পাপ-পথ গামী!
তোরে জিজ্ঞাসি, যথা--
শৃগাল, কবেরে, কোথা 
শার্দুলী লঙ্ঘিল?
কদাপি না শুনি ভবে,
বায়সে, আয়াসে কবে,
লঙ্ঘিল গরুড়ে!
রে--পাপিষ্ঠ, অনধিক,
বলিব কী, তোরে, ধিক্;
অর্থ হীন দর্প কর বৃথা।
নাহি ভাব আগু-পিছু,
কার্য পরিণাম, কিছু;
নাহি তোর বোধে!
সুহৃদে সুকথা কয়,
শুভ কথায়, ক্ষোভ হয়;
কুল-নাশ সাধে।
পাপিষ্ঠ শোন রে, কহি, 
জীবন ধারণে রহি;
দশা তোর, দর্শিতে বাসনা।
তস্কর; ছলনা ফাঁদে,
মোরে লঙ্ঘনের সাধে!
হেথা মোরে করিলে বন্দিনী।
শোন, রে-- কুমতি, চোর!
শুভ কথা, শোন, মোর;
কর্ম-ফল, ফলিবে নিশ্চিত।
জানিও সে' দিশা,
কুকার্যে হলে নিশা;
স্ববংশে, নিশ্চিত মরে।
বিপর্যস্ত ভাগ্য তোর,
দানী, অভিশাপ মোর;
জেনে রাখ হবেনা অন্যতা।
শোন সুশান্ত চিতে,
পিতৃ-কুলে, পিণ্ড দিতে,
পুত্র-কুলে তোর;
রহিবেনা কেহ; ইহা,
অভিশাপ মোর।"
-------------<+>--------------

নিবেদিতা

নিবেদিতা
                   --- ভূপেন্দ্র দাস

প্রিয় তুমি বিদায় নিতে,
বল মোরে কোন চিতে?
চাইছ সাঁঝের বেলা!
খানিক পরে নভোজুড়ে,
শশিকলার চারিধারে;
বসবে তারার মেলা।
থাকি' দীনার বাসর ঘরে,
প্রীতি রসে পরাণ ভরে!
যেও সকাল বেলা।
পথে লোকে, যেতে দেখে;
আগল ঝুঁকে যুগল চোখে!
মুখে সুখের হাসির খেলা।
দাসী ভেবে সঙ্গ দিবে, 
দীনা ভেবে নাহি যাবে;
এখন সাঁঝের বেলা।
---------------^---------------


Tuesday, 13 December 2016

সময়


সময়
                  --- ভূপেন্দ্র দাস।

সময় নদীর জলের মতো,
বয়ে চলে নিরবধি।
জীবন স্থিতি বদল করে,
সময় জলে ভাসাবধি।
ভিন্ন বাঁকে সম্বন্ধকে,
মধুর পাকে ঘোরায় যদি;
দূরে, ধারে স্থিত করে,
কালের বলে নিত্য বিধি।
জীবন চলে সময় জলে।
গন্তব্য তা'র নীলাম্বুধি।
বাস্তবতার বিচার বোধে,
হয় যদি কেউ উপরোধী;
আশা কি আর বাসা বাঁধে;
হারাতে মান করে যদি!
অনুতাপ, বাপরে বাপ!
জ্বলে চলে বহ্নিশিখা।
সময় জলে বয়ে চলে,
সম্ভবেনা চুপ থাকা।
অভিলাষে জলে ভেসে,
আকুতি কূল হারে যদি।
মেনে নেওয়া সমীচীন,
কী লাভ? তা'তে বাদ সাধি!
--------------<+>--------------


নন্দিতা

নন্দিতা
---ভুপেন্দ্র দাস ।


লাকি, মোরে লিখতে বলে,
প্রকৃতি রূপ, তালিকা।
লিখি যথা-- কাব্যিকতা,
দিব্য কথার মালিকা।
হয়নি বাগে ফুল তোলাও,
ফুল সুবাসে পুরাতে আশ।
ঘরে বসি অভিলাষী,
সুখ লাভের ভ্রান্ত বিলাস।
খুব সাহসে পরবাসে;
মরুর পথে ভীরুর হাঁটা।
ফুল চয়নে গমন বনে,
বিঁধবে ভুলি ফুলের কাঁটা;
প্রস্তাবনে জান্তে প্রয়াস,
চারণ কর কোন্ খানে?
কোথা থেকে দেখছ তুমি,
উড়ন্ত বক, বাঁশ-বনে?
সারস পাখি রসিক বটে;
যুগল আঁখির অন্দরে,
বাসা বাঁধে মনের সাধে;
হৃদয় খাঁচার বন্দরে।
মাছে বাঁচে, এই পাখিটি;
পোশাক, চলন, সাধু ভাব।
ঝিলের জলে, তপের কালে,
খপ-করে, মাছ করে লাভ।
এমন পাখির রূপে যা'দের,
মুগ্ধ আঁখি, কবির মত।
দৃষ্টি তা'দের, সৃষ্টি রসের,
মিষ্টি সুধায় হয় আপ্লুত।
হায়রে সারস; কতযে রস,
সাধুর রীতি জীবন মাঝে;
লাকি, দেখি' পুলকিত;
অরুণিমার রাগ সাজে।
----------<+>----------



কুন্তীর ম্বয়ম্বর

কুন্তীর ম্বয়ম্বর
                     --- ভূপেন্দ্র দাস।

স্বয়ম্বর সভা মাঝে,
কুন্তী-পিতা ভোজ-রাজে,
প্রকাশিল, রাজন্য সকাশে।
সূরসেন-সুতা, পৃথা;
কুন্তী নামে, মম সুতা।
প্রবেশিকা, সংসার সমরে।
প্রশ্ন তার, সভা প্রতি;
করিতে বাসনা অতি;
প্রার্থী গণে, রাজ-কুল মাঝে।
পতি নির্বাচন হেতু;
উত্তর আধারে সেতু,
রচনার; অন্তরে আকুতি।
নৃপতি-কুমার কুলে,
উত্তরে উত্তীর্ণ হলে;
ধার্য করে, জীবনের সাথী।
সভাসদ, আজ্ঞা লাভে;
অতি সাবলীল ভাবে;
প্রকাশিল যাচনার সার।
"গৌতম পত্নী'-দেবরাজে;
ক্ষতি করে, রতি কাজে;
তা'তে, দণ্ড-প্রাপ্তি তার।
গত বহুদিন, পরে;
শ্রী-রামচন্দ্র ক্ষমা করে।
কেমন-তর ন্যায় বিচার?
এই অপরাধ ক্ষমা করে,
ভবিষ্যতের-প্রজন্মরে,
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে;
কী দানে; শ্রী-ভগবান;
শুদ্ধ, না, ভুল উদাহরণ?"
জানিবারে অন্তরে আকুতি।
সভাসদে, প্রশ্ন শোনে;
ভিন্ন জনে, ভিন্ন মনে;
প্রয়াসীল দানীতে উত্তর।
প্রথম বলে, "ভগবান;
অকারণে কৃপা নিধান।
ক্ষমা দান, করিল সতীরে।"
দ্বিতীয় কয়, "বালী, রাবণ,
অপরাধী, অভাজন;
সুপথে না চলে হীন মতি।
অকারণে কৃপা নিধান,
করে' কেন সাজা দান!
মৃত্যু-বাণ হীন অভিমুখে।
তাই জানিতে প্রশ্ন করা,
প্রাণে মারা, কেমন ধারা!
পক্ষপাত? না, রুক্ষ বিধান?"
তৃতীয় কয়, এই ফাঁকে,
"দণ্ডেরওতো সীমা থাকে।
হেন বোধে, মুক্তি দিল তা'রে।"
চতুর্থ কয়, "আমার মতে,
অহল্যা, খুব দুঃখ চিতে;
ধারণ হেতু, শিলা রূপ।
স্বামী সেবা, কার্য-ফলে,
চলা, বলা, রুদ্ধ হলে;
অন্তরে হয়, অনুতাপ।"
মৌন, অনেক স্বরব-জনে;
প্রশ্নকে বিপত্তি গণে;
এত কঠোর; সতীর সাজা!
কিছুকাল ধৈর্য ধরে,
জনরব, নীরব করে;
উত্তরিল, পাণ্ডু রাজা।
"বিচার কাজে, কৃপার কথা!
পক্ষ, রুক্ষ সকল বৃথা।
নীতি শাস্ত্র, গতি নীর হেন।
অকারণে কৃপা নিধান;
এই ঘটনে দেখতে পান,
বামা, দুষি নহে কদাচিৎ।
দেবরাজের কার্য-মান,
কু-বাসনা প্রণিধান!
দণ্ড-ভোগ নহে অনুচিত।
নিজ-রূপ গুপ্ত করে;
গৌতমের রূপ ধরে;
সতী' নীড়ে, করিল প্রবেশ!
সরল্যে বিবশা ধনী;
স্বামীকে দেবতা জানি,
যাচনায়, সেবা দিল তারে।
হেন কালে স্নান সেরে,
গৌতম ফিরিল ঘরে;
পলায়ণে দেখে দেবরাজে।
দেখে, নিজ রূপ ধরে,
দেবেন্দ্র পশিল ঘরে!
তস্কর হেন, যেন গতি।
অন্তরে উপজে তাপ;
ঋষিপ্রোক্ত অভিশাপ।
কমণ্ডলু বারি ঝাড়ি বলে।"
" ভগে মজা, দেবরাজ;
দেহ তাঁর ভগে সাজ।"
প্রতারণা' ফলে পরিণাম।
জায়াকে নেহারি' বলে,
"পাপীয়সী, মোর কুলে;
তব তরে, কালিমা লেপন!
আমি তোরে দানী শাপ
ভোগ নিজ কার্য তাপ,
শিলা রূপে থাক তুমি হেথা।"
"মুনি--রাজ কোপে, বামা;
বিনয়ে পেলনা ক্ষমা;
শিলা রূপে, ভূমে নিপতিতা।
দোষে, রোষ হেতু, মুনি;
করে উপবীত খানি,
সতী প্রতি শাপ দানে ভ্রমে।
বিচার কার্য চলে যবে,
নিন্দুকেরে বন্ধু ভেবে;
সু-জন যদি, কু-জনেরে দেখে!
হীনের পীড়ন চলে যদি,
ন্যায় বিচারে আশাবাদী;
কোন আশাতে হয় লোকে!
তাইতে বলি, আসুন সবাই,
ঘটনাটির অন্তরে যাই।
অপরাধী নিরুপণ হেতু।
বিচার করা সমীচীন;
দু'য়েতে, কার কার্য হীন?
সমীচীন, তাঁরে সাজা দান।
হীনের বোঝা, দীনের কাঁধে!
দান করাতে, বিবেক বাঁধে।
সমাজের সমূহ কল্যাণে।
অকারণে কৃপা নিধান;
অহল্যাকে ক্ষমা দান, 
করা, তাঁর লোক হীত কাজ।" 
উদার, মনীষা গুণে, 
বিচক্ষণ, বিচারণে; 
পাণ্ডু-রাজা, রাজ-কুলমণি।
উপনীত, অত্র সভা' মাঝে;
দুষীল দেবতা রাজে।
শঙ্কা নাহি করে ভবিষ্যতে।
বাঞ্ছিত উত্তর লাভে,
সুবদনী প্রীতি ভাবে;
মালা দানে, বধূ সাজে, তাঁর।
-------------<+>--------------