Sunday, 29 January 2017

যাতনায় যাচি

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
যাতনায় যাচি
--- ভূপেন্দ্র দাস।

গর্ব খর্ব পরিতাপে!
অসার সংসারে;
নিয়ত কাঙাল তুমি,
বাহিরে-ভিতরে!
নিয়ত ভিখারি ভাব,
দ্বারে জেগে থাকে।
কেন? হেন গোপ্য,
তুমি করেছ নিজেকে!
প্রচ্ছদ কবচে সদা,
রাখো নিজ ঢাকি;
সত্য গোপন কেন?
কা'কে দিতে ফাঁকি!
মনের চেহারা মুখে',
রক্ত মাখা ছবি!
কী লুকালে হিয়া কূলে;
আমি তা'ই ভাবি!
একদা নিশীতে হেরি,
বাতায়ন পথে;
আধারে স্থাপিত শির,
নীরবে কাঁদিতে!
কেনো কাঁদ? বলো শুনি,
কী যাতনা শোক?
চেয়েছ কী? নাহি পাও!
শূন্য বোধ বুক!
বুঝি না'ই, যাচি তাই;
হেন কোন ধন?
কদাপি কাহারো হয়,
একান্ত আপন। 

----------<+>-----------

Monday, 23 January 2017

শাসন, সোহাগে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
শাসন, সোহাগে
--- ভূপেন্দ্র দাস।

ভারি তোমার রূপের বাহার!
মানি ইহা সত্য কথা।
রূপের সাথে রঙ মিশিয়ে,
চিবুতে চাও যুবক মাথা!
যুবক যাবে অধঃপাতে!
তুমি সুখে রইবে, যথা--;
কেমন করে নিরন্তরে;
ভাবছ তুমি এমন কথা!
রূপের জ্বালায় দেহ মিলায়;
যুবক জীবন জ্বলবে যথা!
তা'তে তুমি রেহাই পাবে!
জের জ্বলুনি যায়কি বৃথা?
বক-বকানি অনেক হলো!
শুনে মন ক্ষুণ্ন হ'বি।
অল্প বলি, উল্টো কথা;
শোনার তরে ধৈর্যে র'বি।
রমণী তুই রমার জাতি;
নারায়ণের সঙ্গ নিবি।
দুখী-জনে, সুখ দানে,
শান্ত-মনে আশিস দিবি।
প্রীতি-রসে, অবশেষে,
ভবের সবের পূজা পাবি।
হৃষ্ট চিতে পুষ্ট দিতে,
কালের গতি ভুলে যাবি।
নারী--যে, তুই মায়ের জাতি।
তোর চরণে প্রণাম করি!
অভিশাপ দিসনে মোরে।
তিক্ত-কথার দুঃখ স্মরি!
এত কথার পরে যদি,
না রাখিস মা আমার কথা!
তোর সাথে রয় আড়ি আমার,
তুই খা'বি, তোর মায়ের মাথা।
----------<+>----------

Sunday, 22 January 2017

নাচব দুখে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
নাচব দুখে
--- ভূপেন্দ্র দাস।

ভালোবাসা অপরাধের;
এই কথাটি কোথায় পেলে?
ভালোবাসায় অমর জীবন;
এমন কত প্রমাণ মিলে।
তবে, এমন বিরাগ ভাজন!
ভালোবাসায়; কেন হলে?
অমর প্রেমের অবাধ টানে,
লাইলী সাথে মজনু মিলে।
শীরী এবং ফরহাদে প্রেম;
জেনে নিলেম, গীতির ছলে;
অমর প্রেমের এ'সব কথা;
সব কিছু কি যায় বিফলে?
তবে উচিত ঘৃণা করা;
সবাই, মনের কুতূহলে!
ভরে যাবে সভ্য সমাজ;
ঘৃণার গরম বাতাস বলে!
সুখে মোরা আত্ম-হারা!
নাচব দুখে, বাহু তোলে!
----------<+>----------

প্রীতির স্বপন

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
প্রীতির স্বপন
--- ভূপেন্দ্র দাস।

ঋষভবতী কূলের কথা,
মুগ্ধ মনে ভাবি!
রমণীয় রূপ মাধুরী,
দর্শে যদি কবি;
শ্মশান ছেড়ে, কাশে হেরে,
পিনাক পাণির ছবি।
দূর্বা, তৃণের মাদুর পাতা,
মকমলেরই মতো।
হেথায় সেথায় কলকা করা,
বলব সে' আর কত!
প্রীতিলতার লীলা ভূমি',
বলব কি, সে' কথা!
প্রাতঃকালে সেথায় গেলে;
শিশিরধারী তৃণের পাতা;
যতন করে, সকলেরে;
ধোয়ায় চরণ। যথা--,
নিবাসখানি তারই কাছে,
পল্লী বটে, পটের মতো।
মাঠ চিরে পা'র পথটি গেছে,
শিরে কাটা সিঁথির মতো।
সেথায় চরে চোখে পড়ে,
প্রীতির কুটিরখানি;
চারখানি চাল, বাঁশের বেড়া,
বেনা-বনের ছানি।
কুটিরখানি বন-দেবীর,
মনোহারী পুরী;
বাঁশের মাচায় মাদুর পাতা,
শয্যা শোভা, ভারি!
দিনের শেষে ক্লান্তি নাশে,
শয়ন করে তা'তে;
ঘুমের ঘোরে লীলা করে,
স্বপন চোখের পাতে।
দিনের খেলায় মিটেনি সাধ,
মিটায় রাতের বেলা!
মন-খুশিতে, মালা গাঁথে,
প্রসূন চয়ন খেলা।
ভুঁইচাপা, জুঁই চয়ন করে;
সেই বনফুল হেলা!
বৃথা গেল, ফুলের চয়ন;
হয়নি, সে' ফুল তোলা!
যে ফুল দোলে, মাধব গলে,
দোলায় পুলক দোলা।
ঘুমের ঘোরে, স্বপন জুড়ে,
হচ্ছে, সে' ফুল তোলা।
----------<+>----------

সংস্কার মূলে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
সংস্কার মূলে
--- ভূপেন্দ্র দাস।

শিশু যখন ধূলে খেলে,
মাতা-পিতার স্বপন চোখে;
বড় হয়ে, ফুলের মতো
প্রতিষ্ঠিত, সমাজ বুকে।
সে'দিন যবে সমাগত,
রূঢ় বাস্তব মূর্তিমান;
সুত কাজে লোক-লাজে,
দিল দরিয়ায় ব্যথার বান!
"এমন হলো কেমন করে?"
প্রশ্ন, পরস্পরের কাছে;
পুত্র নিকট করত প্রকট,
যা'তে কেবল লাভ আছে।
সুপথ ছেড়ে কুপথ ধরে,
আত্ম-স্বার্থ সুখের টানে;
ভেসে চলে কুতূহলে,
মন্দ মনে দ্বন্দ্ব বানে।
ছিল যবে কোমল মতি,
কুসংস্কার মুক্ত;
সে'দিন, মাতা-পিতা, হ'লে---
সুশিক্ষা ভাব ভুক্ত।
মাতা-পিতা যদি মনের
আশা বশে রাখত;
দুখে, সুখে হাসি মুখে---
'তুষ্ট সদা থাকত।
ত্যাগী নিজের প্রয়োজনে,
সকল অপ-কর্ম;
সুত মনে সঙ্গোপনে,
বাঁধত বাসা ধর্ম।
এ'সব কথা আমার নহে,
হও যদি কেউ সন্দিহান;
মহাভারত খোলে দেখো,
বলে' 'কৃষ্ণ ভগবান।
----------<+>---------

তাজ সাহিত্য কুটিরে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

তাজ সাহিত্য কুটিরে
--- ভূপেন্দ্র দাস।

মায়ের নিকট মামার বাড়ির
গল্প বলার কথা;
মুরুব্বিদের মর্ম বাণী,
বাহুল্য বাক যথা--
মামার বাড়ি নিতান্তই,
মায়ের বাপের বাড়ি।
যার সাথে মা'র, নিবিড় বাঁধন,
বলছি কথা তারি।
ফেস বুকেতে গ্রুপ গুলোতে,
সবার সেরা "তাজ"।
"শানু" দিদি, নিরবধি,
করে যেথায় কাজ।
দিদি, "তাজের" উৎপাদিকা,
শীতল প্রীতির ছায়া।
চিপ এডিটর রুশনী দাদুর,
নাই মোটেও মায়া।
কড়া ভাষায় করে কেবল,
লেখাতে বিচার।
ছন্দ, মাত্রা, তালে মিলে,
কম হলে, মন ভার।
কিন্তু যদি কোনও লেখা,
নিখুঁত ভালো হয়।
হর্ষে পরাণ নাচে দাদুর,
কতই কিছু কয়।
"তাজ কুটিরে" লেখক যেন
ভালো লেখক হয়।
হেন আশে পরামর্শ,
রুশনী দাদু দেয়।
লেখায় কিছু ত্রুটি হলে,
রুশনী দাদু মোর।
তৎক্ষণাৎই দেখিয়ে দেয়,
লেখক করে দূর।
নবীন, প্রবীণ সব লেখকে,
"তাজ কুটিরে" ডাকি।
লেখা শেখার অনেক সুযোগ
"তাজের" মাঝে দেখি।
আছে, দাদুর ভালোবাসা,
দিদির মধুর প্রীতি।
"তাজ কুটিরে" লেখক হলে,
হয়তো র'বে স্মৃতি।
গঙ্গাজলে গঙ্গা পূজা,
এ'যাবৎ কাল করছি।
ভক্তি ভজা অতি সোজা,
এই সাহসে লড়ছি।
মরণ বরণ জয় মানসে,
এই সুরে গান ধরছি।
----------<+>----------

লজ্জা কেন

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
লজ্জা কেন
--- ভূপেন্দ্র দাস

লজ্জার গভীরে গেলে 
পাই, সঙ্কোচতা; 
আরেকটু গভীর হলে,
নাই উদারতা!
আরেকটু গভীরে কয়,
কবির কবিতা;
অর্চিতে, চর্চিয়া পাই,
বৈশিষ্ট্যে হীনতা।
প্রবচনে সবে জানে,
গুণী' মুখে শোনা
"কয়লার ময়লা কভু,
ধোইলেও যায়না!"
হেন জন মন্দ মন;
র'বে অনুখন।
তাহারে উদার কিসে,
করিবে এখন?
কুমতি, সুমতি লাভ,
করেনা কখন।
নিজেকে রক্ষিতে তা'র,
লজ্জা প্রয়োজন।
----------<+>------

Friday, 13 January 2017

মৃত্যুঞ্জয়ী

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
মৃত্যুঞ্জয়ী
--- ভূপেন্দ্র দাস।

লতা, সুত, সুতা কোলে,
জীবন সুখে চলে।
অসার এ'সব সুসার নহে;
তলায় সময় তলে।
জীবন তরী, সাজবে যদি,
রঙধনু-রঙ সাজে।
অনন্ত কাল, ভেসে র'বে;
লাগবে সবার কাজে।
প্রয়াস করা, উচিত সবের,
সাজবে এমন সাজে।
অন্তরে যার, ভৈরবী সুর,
এমন তরো বাজে।
লোকান্তরে, অন্ত নহে;
অমর নিজের কাজে।
ধরা থেকে, যাবে সুখে;
রইবে হৃদয় মাঝে।
----------<+>----------


সুখের ভেলা

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

সুখের ভেলা
--- ভূপেন্দ্র দাস।


পড়ায় বসি', দেখি শশি;
নাই পড়াতে মন!
নিষেধ কিসে, ভাবি বসে;
বেড়াতে এখন।
মা কেবল কয়, ঘোরা বারণ;
পড়া প্রয়োজন।
আমার সুখে, মলিন মুখে!
চায় কী, মায়ের মন?
"পড়তে বসে দেখলে শশী, 
কেমনে হবে পড়া?"
মা তাই বকে, মনের ঝোঁকে;
কারণ শশী হেরা।
শশি মোরে বলে হেসে;
হের তারার মেলা।
তুমি যদি আস প্রিয়;
খেলি প্রণয় খেলা।
সুখ লালসায়, মন যেতে চায়,
পড়ায় করি হেলা।
পড়ায় বসি' দেখি শশি';
ডুব সাঁতারের খেলা।
মেঘের কোলে, কুতূহলে;
ভাসায় সুখের ভেলা।
----------<+>----------

সংযমী

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
সংযমী
--- ভূপেন্দ্র দাস।

প্রিয় জনে, পাওয়ার আশা,
পোষণ করে মন।
নিজের তরে, যতন করে;
মধুর প্রেম ধন।
বুঝে না সে, সোজা কথা;
দুঃখ, সুখের সার।
সন্তুষ্টিতে হৃষ্ট হৃদয়;
দুঃখ নাহি তাঁর।
চাওয়া, পাওয়া হয় না যখন,
দুঃখ তখন হয়।
পাওয়া পরে হারিয়ে গেলে,
দুঃখ টি কম নয়।
প্রিয়ার লাগি, প্রেমিক ত্যাগী;
বিয়োগ ব্যথা সয়।
দুখের কোলে, সুখের ছলে;
প্রেম জীবিত রয়।
প্রেমিক হৃদয় কল্পনাতে,
প্রেমের কথা কয়।
দুখ নিয়া; সুখ দান করে সে,
দুঃখ করে জয়।
হেন মনে, শুদ্ধ জ্ঞানে,
প্রেম করিতে হয়।
----------<+>----------


সুরেশ কবি (স্মরণে)

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

সুরেশ কবি
(স্মরণে)
--- ভূপেন্দ্র দাস।

সুরেশ বাবু সভা কবি;
মুখই অস্ত্র, কলম নয়!
সভায় যেয়ে, গানে গেয়ে,
যত শাস্ত্র কথা কয়।
সে'সব, যদি লিখে যেত,
নবীন, কবির সুর পেত।
সৃষ্টি তাহার, কৃষ্টি রূপে,
জন-মনে, আসন নিত।
ভাব পিয়াসী শ্রোতা গণে,
বাঞ্ছা করে, সুরেশ গীতি।
মাধুর্য রস, কবিত্ব ময়,
সুরেশ কবির গানের রীতি।
রইল-না তা', কইল যাহা,
সুরেশ কবি, সভার মাঝে।
গাইছে গীতি, শুদ্ধ মতি,
বৃদ্ধ ভাবে, গায়ক সাজে;
হয়না সুরেশ কবির গীতি,
শূন্যতা বোধ হিয়ার মাঝে।
----------<+>----------

প্রেম রীতি

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
প্রেম রীতি
--- ভূপেন্দ্র দাস।

স্বার্থ বিহীন অলকা' ধন,
প্রেমের করি স্তুতি।
প্রেম করেনা পাওয়ার আশা;
প্রিয়জনের প্রতি।
বিলায় কেবল ভালোবাসা।
দেওয়াই প্রেমের রীতি।
চায়না কিছুই কদাপিও,
বিলায় কেবল প্রীতি!
সে' গুণ বলে, কাল কবলে,
রয় প্রেমিকের স্মৃতি।
প্রেম কাহিনীর চিরন্তনী,
মধুর অনুভূতি।
----------<+>----------

Wednesday, 11 January 2017

প্রিয় চাঁদ

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
প্রিয় চাঁদ
--- ভূপেন্দ্র দাস।

আকাশের চাঁদ,
যদি জাগে সাদ;
ধরাতে আসিও।
বাতায়ন খোলা,
সারা নিশি বেলা;
ঘরে পশিও।
আদরে, আঁচল---
পাতিয়া দিব;
তা'তে বসিও।
ভাবিওনা মনে,
তোষিব কেমনে?
দীনা যদিও।
শোন চিতচোর,
যাহা আছে মোর,
সকলই নিও।
হে চাঁদ আমার,
বল এক-বার;
" পরাণ প্রিয়া,
সুখে থাকিও।"
আরো বল যদি,
নভের নিধি;
" আসিব একদা,
মনে রাখিও।"
---------<+>---------

বঞ্চনার ফল

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
বঞ্চনার ফল
--- ভূপেন্দ্র দাস।

মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু সবাই জানি,
সোহাগ সুধাসিন্ধু যেন,
মায়ের হৃদয় খানি।
সেই সোহাগে বঞ্চিত, যে--
হত-ভাগ্য ছেলে!
কোল হারিয়ে, হাঁড়ির যোগে,
ভাসে নদীর জলে।
ভাগ্যটি তা'র মন্দ!
কত, নিঠুর নিয়তি!
জলে ভাসে; কাঁদে, হাসে;
কেউ নহে তা'র সাথী।
মরা, বাঁচা বিধির হাতে,
জীবন ধারণ রীতি।
নদীর সোঁতে, ভেসে যেতে।
ভিড়ে তীরে; হাঁড়ি-যানী যতি।
ডাগর হলো অন্ধকারে,
মায়ের স্নেহ বিনে!
সোহাগ সিনান জোটেনি,
তা'র; দুঃখ, সুখের দিনে।
এমন ছেলে, কেমন করে,
কোমল স্বভাব হয়?
রুক্ষ স্বরে ব্যক্ত করে,
শৌর্য পরিচয়।
বিক্রমে, তা'র সমান হবে,
ভারত ভূমি তলে;
তা'রই অনুজ, সুখী সদা,
তা'রই মায়ের কোলে।
যদিও তা'রে চিনে মাতা,
নিজের খোকা বলে;
কয়নি তা'রে, আয়রে খোকা;
ওরে, আমার ছেলে।
পায়নি আদর; সোহাগ-সুধা;
অন্তরে তাই, ক্ষুধার আগুন জ্বলে।
সোহাগ-সুধা, স্নেহ-ময়ী,
মায়ের অবহেলে।
কী আর বলা, বৈর চলা;
অনুজ বনাম চলে।
-------------<+>-------------

বিরহ বেদনা

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
বিরহ বেদনা
--- ভূপেন্দ্র দাস।

কোনও পাখি, উড়ে নভে,
খুঁজিয়া বেড়ায় ভবে,
জীবনের সাথী।
কিন্তু তার সঙ্গিনী,
ভবে, বসে; একাকিনী,
হিয়া কোণে ভীতি!
কাঁদিছে সাথীর তরে;
বেদনার ব্যথা বাড়ে;
শোনে যবে, পূরবীর স্তুতি।
আমাকে ছাড়িয়া বঁধু,
যামিনী যাপিতে শুধু;
যাচে তরু বীথি!
কিন্তু, এই নীড় হারা,
ম্রিয়মান, সাথী ছাড়া;
শোকে যাপে, নিরাশার তিথি।
হয়তো, না-হবে দেখা,
সঙ্গীহীন ভবে থাকা;
ভাবে, বুঝি, ইহাই নিয়তি!
যদ্যপি দূরেতে বাস,
তথাপি অন্তরে আশ;
সুখে র'বে সাথী।
অতীতের প্রীতি অনুরাগে,
অন্তরে নিয়ত জাগে;
মিলনের, মধু-ময় স্মৃতি।
গহন কানন মাঝে,
আপন মনের সাজে,
ফোটে ফুল; রীতি।
অলি-কুল, ফুল-কুলে,
মধুর গুঞ্জন তোলে;
বিলকুল, করিতে আরতি।
একদা, সে, ঝরে যায়,
বিরহী অন্তরে তায়
প্রকাশিত, বেদনার ভাতি।
----------<+>----------

১৪০০ সাল

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
১৪০০ সাল
--- ভূপেন্দ্র দাস।

ভাবনায়, ছিলে যবে,
আলোকে-আঁধারে; তবে,
বাঙলার কবি-গুরু রবী',
আজি হতে শত বর্ষ আগে।
গাহিলে যে গান, তুমি;
গগন, সাগর, ভূমি,
লীলায়িত প্রকৃতির,
প্রীতি অনুরাগে!
তাহারে করিয়া পুঁজি,
বসন্ত জাগ্রত আজি,
তব গান প্রতিপাদ হেতু;
প্রকৃতির মনে সাধ জাগে।
আজি এ' বসন্ত গীতি,
গাহি' তব সুখ্যাতি,
সমীরণ অনুখন
প্রবাহিত ফুল্লানুরাগে।
----------<+>----------

বিষের বাঁশি

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
বিষের বাঁশি
--- ভূপেন্দ্র দাস।

ধন্য মানি, তুমি গুণী;
গাইলে কত প্রেমের গীতি।
বিষের বাঁশির শানে মনে,
প্রেম জাগরণ দেশের প্রতি।
অধর কূলে বিষের বাঁশি,
চেতন করে, ললিত সুরে!
শোনার তরে আকুল হিয়া,
পরাণ পাখি কেমন করে!
বিদ্রোহী ভাব, প্রেম পূজারী;
প্রণয় করে বাঁশির সুরে!
শানে মনে বলে কেবল;
মোদের ছাড় কেমন করে?
গোলকবাসী, দিবা-নিশি,
তোমার আসন, মনের ঘরে।
সুখে বসি বিষের বাঁশি,
বাজাও আজি হৃদয় পুরে।
---------------<+>---------------

শারদ পূজা

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
শারদ পূজা
--- ভূপেন্দ্র দাস।

মন্দ সমীর, গন্ধে মাতায়;
ঝরা প্রসূন রাশি।
সেথায় হেরি, পরাণ ভরি',
শিউলি ঝরার হাসি।
টাটকা নহে, ঝরা, বাসি;
হেরি, বাড়ির অলিন্দে।
সেথা থেকে, হেথা আসে,
মন হরে, সেই গন্ধে।
সনাতনী, শারদ পূজা,
শাস্ত্র-কথার নির্যাসে;
শিউলি 'বাসে, শরৎ শেষে,
প্রতি বছর, মা আসে।
বোধনে, কী অনুধাবন!
আগমনী মা হাসে।
উপোচারে, পূঁজি তাঁরে;
উপবাসে, তিন দিবসে।
দশমিতে, বিদায় দিতে,
বিষম ব্যথা অন্তরে।
রয়না হেথা, যায় কোথা?
যাচি শিব কান্তারে।
উত্তরে পাই, শাস্ত্র তথ্য;
সত্য মানি, বিশ্বাসে।
শৈল সুতা, যাবে যথা,--
শিবের বাড়ি, কৈলাশে।
------------<+>------------


মধুর প্রেম

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
মধুর প্রেম
----ভূপেন্দ্র দাস ।

প্রেমের নামে, গায় অপবাদ!
পায়নি যা'রা, প্রেমের স্বাদ!
মিলন হলে দু'টি মনে,
কাল কাটাবে, একই সনে!
অপকথা বলে যা'রা,
পাড়া ঘুরা, কর্মী তা'রা।
মন্দ কথা! ছন্দ করে;
প্রকাশ করে, প্রেমের তরে!
দুই মনে, এক মন হলে;
হয়না বিয়োগ, কোন কালে।
মনের সাথে মন মিশে রয়;
দূর বসতে, বিয়োগ না হয়।
কল্পনাতে, প্রেম কথা কয়!
তাই, বিরহে প্রেম মধুময়।
--------------<+>--------------


প্রেম গীতি

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
প্রেম গীতি
--- ভূপেন্দ্র দাস

চিত্তে যারে পেয়েছিলেম;
নাইবা পেলেম দেহে।
দূরে বসত হয়কি তাহার,
বসত হৃদয় গেহে।
পরিমলে মলয় সমীর,
কাল বসন্তে বহে।
কোকিল ডাকে, তরু-শাখে;
দয়িত কথা কহে।
সুখের কথা, স্মরি যথা--
হিয়া যদি' দহে।
দয়িত সুখে, পাথর বুকে;
দুখের জ্বালা সহে।
ধন্য মানি, প্রেম ব্যাখ্যানী,
প্রেম কাহিনী কহে।
উজার করে, সকল দানে,
সুখ ভোগে; দুখ নহে।
রাধা হৃদয়, বাঁধা সদা,
কৃষ্ণ প্রেম সুখে।
সেই কারণে, জগ'-জনে,
প্রেম গীতি গায় ঝোঁকে।
-------------<+>-------------


Monday, 9 January 2017

মায়ের স্মৃতি

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)

মায়ের স্মৃতি
--- ভূপেন্দ্র দাস।

মা যদি মোর আকাশ হতো!
আমি হতাম চাঁপার গাছ!
মায়ের সনে, নিরজনে,
হতো কথার নাচ।
দিনের বেলা রৌদ্র দিত,
রাতে চাঁদের আলো;
পাইনি বলে কইনি আমি,
মা আমার খুব ভালো।
গরল ভাষায় করত শাসন,
সরল আঁখির বানে;
ব্যথার ওষুধ, প্রলেপ দিত,
মোরে সোহাগ দানে।
সেই মাকে যে হারিয়েছি;
জীবন-সকাল বেলা;
মরণ কূলে স্মরণ নিল,
করছি যখন খেলা।
মনে পড়ে মুখটি মায়ের;
আলো-ছায়ার ছন্দ,
স্মৃতির পাতা ঘাটি;
যথা,-- লাঠি হারা অন্ধ!
মন্দ-গতি ললাট লিখন;
পাই যাতনা স্বভাব দোষে!
দুধ খেয়েছি মায়ের কোলে;
ভুলে গেছি কালের বশে।
যখন মায়ের কোল ছেড়ে,
এই ধূলির কূলে খেলি।
বলত, "বাঁদর"! করত আদর;
সোহাগ সাথে গালি।
করত প্রহার, অন্তরে তার,
ঝাড়ছে গায়ের ধূলি।
এই ছিল, মোর মায়ের আদর;
শাসন, কড়া মিষ্টি।
মায়ের ছবি কল্পে ভাবি,
ঝাপসা মনের দৃষ্টি।
মায়ের শাসন সোহাগ বিনে
জগৎ মাঝে যতই পেলেম;
ভরেনি মোর শূন্য পরাণ!
লোক সমাজে তবু' নিলেম।
ঘোলে দুধের স্বাদ মিটাতে;
মেয়েতে মার রূপ দেখেছি।
মায়ের সোহাগ, মেয়ের নিকট,
হয়তো পাব, আশায় আছি।
শূন্যতা মোর রইবে তবু';
হই যদিও কুবের ধনী!
ছেলের স্বভাব, রইবে অভাব,
সোহাগ সুধায় চির ঋণী
শাসন, সোহাগ, আশিসে মার;
জীবন আমার ধন্য মানি।
---------------<+>---------------


মা বিহনে

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
মা বিহনে
--- ভূপেন্দ্র দাস।


কাঁদে নাকি, চাঁদের ছেলে?
শশি-কলার কর কোলে!
আচমকা মা'র বকানিতে;
ঘুম-পাড়ানি চায় পলাতে!
মন খারাপের কথা বটে,
বেদম প্রহার পড়লে পিঠে!
খাট ছেড়ে ধায়, খেলার মাঠে;
মলিন মনে একাই হাঁটে!
কী-রে সখা, কী হলো রে- -?
জিজ্ঞাসি, তাই, নয়ন বারি ঝরে!
ঘুম ধরেনা গভীর রাতে;
পিতা মোদের নেইতো সাথে!
কাটাই নিশি তাই ভাবিতে!
মার খেয়েছি, মায়ের হাতে।
শান্তনা দেই, গিয়ে কাছে;
আরে--বোকা, কী হয়েছে?
যদিও পিতা নেই রে কাছে,
স্নেহ-ময়ী মা'তো আছে।
শাসন, সোহাগ, নীল দরিয়া;
স্নেহ-ময়ী মায়ের হিয়া।
মায়ের শাসন নয়রে মিছে,
বুঝবে, মাতা--মরার পিছে।
অনুধাবণ করবে তুমি,
মা বিহনে দিবা-যামী।
----------------<+>-----------------


আত্ম সুখের বলিদান

কবিতা রস বিতান (ক,র,বি,)
আত্ম সুখের বলিদান
--- ভূপেন্দ্র দাস।


রচনের বাচনিক গোবিন্দে প্রচিত।
মানবের মনোভাব কী হওয়া উচিত।
মরণের পরে যদি, চাও বাঁচিবারে;
সকলের তরে দান করিও নিজেরে।
পরের দুঃখকে যে আপনার কয়;
হেন জন, জনমন করে সদা জয়।
পুরাকালে সংঘটিত, গ্রন্থে পাই, যথা;
পঞ্চ-পতি বরে সতী, পাঞ্চালীর কথা।
যত্ন সহকারে পার্থ লক্ষ্য ভেদ করে,
পাঞ্চালী সহিত যায় মায়ের গোচরে।
অলভ্য লাভ হেতু আনন্দে আকুল;
মায়ের সকাশে কথা কহিল নকুল।
ভাগ্যে আজি দান লাভে, পার্থ বীর ধন্য!
অবশ্য ভবিষ্য দিন, ক্রান্তি কাল গণ্য।
হেন কথা শোনে বলে পূজারিণী মাতা;
"বাঁচারে, আচার ব্যর্থ শিখায়েছি; যথা,
শ্রমের অর্জিত ফল দান প্রপ্তি লাভে,
পঞ্চ-জনে, সেই ধনে সমানে ভুঞ্জিবে।
আজি প্রাপ্ত হলে যাহা দান লাভ ফলে;
ভোগ কর পাঁচ ভাই সমানে সকলে"।
মাতৃ আজ্ঞা হেন কথা, কেমনে পালিবে!
অধর্ম নিশ্চিত, তা'তে লোক-নিন্দা হবে।
করণীয় ধার্য হেতু ভ্রাতা গণ ভাবে;
পার্থের পরিণয়, চার বনে যাবে।
করণ সিদ্ধান্ত শোনে, দ্রুপদ দুহিতা;
পাণ্ডব সকাশে বলে লোক-হীত কথা।
"একে সংসারী হবে, চারে গেলে বন।
হস্তিনার রাজ-ভার, পাবে দুর্যোধন।
হেন মন্দ-মতি জন রাজ-বল লাভে,
সুশাসন জনতার কভু কি সম্ভবে?
ভিন্ন দিক ভাবি' দেখ নিজেদের হীত।
চার ভাই শোকে, এক র'বে কী জীবিত?
হেথা মোর নিজ মত প্রকাশিতে চাই;
মাতার আদেশ পালন করিব সবাই।"
হেন কালে উপনীত ব্যাস দেব মুনি।
"সাধু-বাদ দিতে সাধ, শোন যাজ্ঞসেনী,
তোমার ভাবনা ভাল, কথা লোক-হীত;
হেন বিধি আপদ্ধর্ম, আর্তে আচরিত। 
যদাপি অধর্ম ইহা সবে আচরিতে;
তথাপিও ধর্ম তাহা আপদে তরিতে।"
ব্যাসের বর্ণিত এই বিধি-বাক্য সারে;
পাঞ্চালী সহিতে পাণ্ডব পরিণয় করে।
পঞ্চ-জন সমর্পিত পাঞ্চালীর প্রতি।
এক বর্ষ স্থিতি কাল, নির্ণিবে যা' সতী।
সর্বদা পালিবে বিধি, তা'ই পঞ্চ বরে;
সদা সমর্পিত সবে, পাঞ্চালীর তরে।
পঞ্চ-পতি মাঝে, সতী বাঞ্ছা করে যারে,
সেই জন যাবে শুধু পাঞ্চালীর ঘরে।
এক বর্ষ স্থিতি কাল, একে ভোগ সীমা।
অন্যরা তোষিবে সদা মানবী প্রতিমা।
হেন বিধি যদি কেহ করিবে লঙ্ঘন;
প্রতিজ্ঞায় দণ্ড ধার্য, যেতে হবে বন!
হেন-রূপ ধার্য করা বিধি অনুসারে,
গোবিন্দ স্বীকৃতি দান করিল, কৃষ্ণারে।
হরিষ অন্তরে বলে, "শোন মোর সখি,
লোক-সুখে, নিজ সুখ, বলি দানে সুখী।
তব প্রতি আমি অতি হয়েছি প্রসন্ন।
কদাপি স্মরিলে মোরে, বোধিয়া বিপন্ন।
সঙ্কট ঘুচাইব, যা' হবে তোমার।
সখি তুমি জেনে রাখ প্রতিজ্ঞা আমার।"
---------------------<+>------